Home জাতীয় ঈদ যাত্রা : ২৪০ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৭৩

ঈদ যাত্রা : ২৪০ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৭৩

0
ঈদ যাত্রা : ২৪০ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৭৩
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত ঈদুল আযহায় যাতায়াতে সারাদেশে ১৫দিনে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও স্বল্পসময়ের জন্য গণপরিবহন চালু করায় সড়কে গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগতযান বিশেষ করে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা-ব্যাটারীচালিত রিক্সা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে একসাথে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে বিগত ৬ বছরের তুলনায় এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহাণি দুটোই বেড়েছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ১৪ জুলাই থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২৮ জুলাই পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ৪৪৭ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ০৯ টি ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ০৫ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৩ টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত এবং ২১ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা মিলেছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে যৌথভাবে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ২৯৫ জন নিহত ও ৪৮৮ জন আহত হয়েছে। তবে ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার পর ২৫ জুলাই থেকে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহাণি কমতে থাকে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ৮৭ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত, ৫৯ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬.২৫ শতাংশ, নিহতের ৩৪.০৬ শতাংশ এবং আহতের ১৩.১৯ শতাংশ প্রায়।
এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১০৬ জন চালক, ১৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৪ জন পথচারী, ৩৮ জন নারী, ৩১ জন শিশু, ১২ জন শিক্ষার্থী, ০৩ জন সাংবাদিক, ০৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১২ জন শিক্ষক, ০৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং ০১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছে ০২ জন পুলিশ সদস্য, ০১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ০১ জন বিজিবি, ২৭ জন নারী, ১৭ জন শিশু , ০৯ জন শিক্ষার্থী, ০৯ জন শিক্ষক, ৮৭ জন চালক, ১৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৩ জন পথচারী, ০৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৮.৪৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮.৭৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৭.৪১ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮.৬০ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ১০.৩৮ শতাংশ অটোরিক্সা, ৭.৭১ শতাংশ ব্যাটারী রিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ও ৮.৬০ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
সংগঠিত দুর্ঘটনার ২৫.৮৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪৪.২৫ শতাংশ পথচারীকে গাড়ী চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৮.৩৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ৭.৯১ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারনে ও ০.৮৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁছিয়ে এবং ০.৮৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
 মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৩.৩৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৩.৩৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৮.৩৩ শতাংশ ফিডার রোডে এবং ০.৮৩ শতাংশ রেল ক্রসিং এ সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.৩৩ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৮৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ঈদগুলোতে সরকারের নানা মহলের তৎপরতা থাকায় দুর্ঘটনার লাঘাম কিছুটা টেনে ধরা সক্ষম হলেও কঠোর লকডাউনের কারনে মানুষের যাতায়াত সীমিত থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী না থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। সরকার সড়কের অবকাঠামোর উন্নয়নে যতটা মনযোগী সড়ক নিরাপত্তায় ততটা উদাসীন। বিগত একযুগে ধারাবাহিকভাবে সড়ক নিরাপত্তায় নানা প্রতিশ্রুতি, নানা চমকপ্রদ বক্তব্য, নানা আশ^াস, নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনকিছুই যেন বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখে না। এরই মধ্যে বাস্তবায়নের আগেই সড়ক আইন আরো দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ন মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার ৫টি কারণ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ৭টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
দুর্ঘটনার কারণসমূহ :
১. লকডাউনের কারণে এবং স্বল্প সময়ের জন্য গণপরিবহন চালু করার ফলে মহাসড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন যেমন প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা-ব্যাটারীচালিত রিক্সা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানের বেপরোয়া গতিতে যাতায়াত।
২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মাকিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যাক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো।
৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টানিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালদের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।
৪. মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৫. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ :
১. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
২. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহন, যানবাহনের ত্রুটি সারানোর উদ্যোগ গ্রহন।
৩. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।
৪. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘন্টা সুনিশ্চিত করা।
৫. সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।
৬. সড়ক পরিবহন আইন যথাযতভাবে বাস্তবায়ন করা। ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ রোধ করা।
৭. গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৮. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here