Home অর্থনীতি খাতুনগঞ্জে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ, দ্রুত কমছে দাম

খাতুনগঞ্জে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ, দ্রুত কমছে দাম

0
খাতুনগঞ্জে ঢুকছে ভারতীয় পেঁয়াজ, দ্রুত কমছে দাম

ভারতীয় পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মাথায় হাত পড়েছিল সাধারণ ভোক্তাদের। আর পেঁয়াজ আসা শুরু হওয়ার পর কপাল পুড়ছে ব্যবসায়ীদের। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশীয় পেঁয়াজে ভরে আছে দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো। সেগুলোরই ক্রেতা নেই। এর মধ্যে ভারত থেকে হঠাৎ করে পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় দর পড়ে গেছে একেবারে। তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই পণ্যটির দাম পাইকারিতে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কখনো কখনো তাদের আমদানি মূল্যেরও কম দামে ছেড়ে দিতে হচ্ছে পেঁয়াজ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক  জানান, বন্দরে পড়ে থাকা পেঁয়াজ খালাসের জন্য সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক, শিপিং এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও এসব পেঁয়াজ তারা নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় হয়তো শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের পর কাস্টমসকে পেঁয়াজগুলো যথারীতি নিলামে তোলার জন্য বলতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সংকট কাটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে চড়া দামে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এসব পেঁয়াজে ভরপুর এখন আড়তগুলো। এছাড়া বন্দরেও রয়েছে আমদানিকৃত প্রচুর পেঁয়াজ। পাশাপাশি দেশীয় পেঁয়াজ উঠছে ক্ষেত থেকে। এ পরিস্থিতিতে অবাধে ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকতে থাকায় এখানকার ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছে। আমদানি মূল্যের চেয়েও কম দামে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

চার মাস পর পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় গত ২ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে ভারতীয় পেঁয়াজ। ইতিমধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক এসে পৌঁছেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারেও। ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ে এখন প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি ট্রাক ঢুকছে বাজারে। চীন, মিসর, তুরস্ক, ইউক্রেন, মিয়ানমার, হল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা প্রচুর পেঁয়াজের পাশাপাশি এসব পেঁয়াজ চলে আসায় এখন বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে।

খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বৃহত্তম মার্কেট হিসেবে পরিচিত হামিদুল্লাহ মিয়ার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে আড়তগুলো বিভিন্ন ধরনের পেঁয়াজে ভর্তি। এক সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৫০ টাকা দামে বিক্রি হলেও গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে মানভেদে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৩৫ টাকায়। পচনশীল হওয়ার কারণে লোকসানের ভয়ে কেউ পেঁয়াজ ধরে রাখতে চাইছে না।

হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস  বলেন, যখন আমরা পেঁয়াজের তীব্র সংকটে ছিলাম তখন ভারত পেঁয়াজ দেয়নি। এখন বিভিন্ন দেশ থেকে বেশি দামে আমদানি করা প্রচুর পেঁয়াজ আড়তে আছে। বন্দরেও রয়েছে অনেক পেঁয়াজ। সেই সঙ্গে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজও এখন বাজারে। এ অবস্থায় দেশের ব্যবসায়ী ও কৃষকদের স্বার্থে সরকারের উচিত ছিল অন্তত আরও দুই মাস ভারতীয় পেঁয়াজ আসা বন্ধ রাখা। যাতে আমদানিকৃত এবং দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজগুলো সহজে বিক্রি করা যায়। তিনি বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আসার আগে থেকেই বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে। এখন তো আসা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ১০-১২ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে দেশীয় কৃষকরাও পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ার যে আশা করেছিলেন তাও দুরাশায় পরিণত হবে।

ভারত থেকে রপ্তানি আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার কারণে গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজের দাম ওঠে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এ পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবিলায় সরকার টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেন ব্যবসায়ীরা। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় তখন বড় বড় শিল্প গ্রুপ থেকে শুরু করে ইট-বালির ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে ঝুঁকে পড়েন।

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত চার মাসে বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পেঁয়াজ চলে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সগীর আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে এসব পেঁয়াজ আনতে গিয়ে আমদানি পর্যায়ে প্রচুর ঝামেলাও পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে অতীত অভিজ্ঞতা ছাড়াই অনেকে পেঁয়াজের এলসি খুলে বসেন। চড়া দামে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আসেন তারা। কিন্তু এখন ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে থাকায় আগের পেঁয়াজ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন আমদানিকারকের পক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজের চালান খালাসের দায়িত্বে থাকা সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান মারকো ইন্টারন্যাশনাল সিঅ্যান্ডএফ লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকরামুল হক ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজারে এখন চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ রয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজও আসা শুরু হয়েছে। বন্দরেও পড়ে আছে আমদানিকৃত প্রচুর পেঁয়াজ। এ অবস্থায় বন্দর থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানিকারকরা আদৌ খালাস করবেন কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

সূত্র : দেশ রূপান্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here