
কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোয় কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়লেও এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। অপারেশনাল কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। করোনার মধ্যেও চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে বেড়েছে কন্টেইনার, কার্গো ও শিপ হ্যান্ডলিং। পাশাপাশি এই সাত মাস চট্টগ্রাম বন্দরের সমুদ্রসীমাও ছিল পুরোপুরি দস্যুতামুক্ত।বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, মূলত কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং ও শিপ হ্যান্ডলিং এ তিন ক্ষেত্রের পারফরমেন্স নিয়েই বন্দরের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। তিনটি ক্ষেত্রেই গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।বন্দরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ। ২০২০ সালের একই সময় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ১২৩ টিইইউস। আর চলতি বছর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৮ লাখ ১৫ হাজার ২৮৫ টিইইউস। ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুলাই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৭ টন। আর ২০২১ সালের প্রথম ৭ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৬ কোটি ৪৮ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৩ টন। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। ২০২১ সালের একই সময় হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ হাজার ৪৬৮টি।
২০২০ সালে ২ হাজার ৯৪টি। এক্ষেত্রে চলতি বছর প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অধিকাংশ বন্দরে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। লকডাউনের আওতায় পড়ে অনেক বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এ কঠিন পরিস্থিতিতেও চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম একদিনের জন্য বন্ধ ছিল না। করোনার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে বন্দরের অনেকেই আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। কভিড পরিস্থিতিতে শিল্পকারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে সরকারের চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্তের কারণে আমদানি-রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল ছিল। এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সহযোগিতায় আমরা বন্দর চালু রাখতে পেরেছি।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের পারফরম্যান্স শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, ইউরোপ আমেরিকার অনেক বন্দরের চেয়ে ভালো, মন্তব্য বন্দর চেয়ারম্যানের। বলেন, এখন চট্টগ্রামে জাহাজজট নেই। কনটেইনার ও স্থান সংকট নেই। আমাদের ‘বার্থিং ডিলে’ ৩ থেকে ৪ দিন। কিন্তু চীনের বন্দরগুলোর বার্থিং ডিলে দশদিন। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বন্দরে তা ২০ দিন পর্যন্ত পৌঁছেছে।
চলতি বছর বন্দরে প্রচুর চাল হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। গত তিন বছরে সেখানে চাল হ্যান্ডলিং হয়নি। বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম দেশ রূপান্তরকে জানান, সরকারি নীতি সমর্থন করে বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে এ বছর বন্দরের ৪ জেটিতে চাল হ্যান্ডলিং করেছি। জানুয়ারি-জুলাই সময়ে ৫০ জাহাজ থেকে চার লাখ ৬৮ হাজার টন চাল হ্যান্ডলিং হয়েছে। চালের জাহাজগুলো হ্যান্ডলিং করতে না হলে আমরা অন্য ৫০টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করতে পারতাম।
এদিকে সমুদ্রপথে দস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছর চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় পাইরেসির রেকর্ড নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য রিজিওনাল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট অন কমব্যাটিং পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি এগেইনস্ট শিপস ইন এশিয়ার (রিক্যাপ) অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর বাংলাদেশের জলসীমা ছিল দস্যুতাশূন্য। ২০২০ সালের এই সময়ে এদেশের জলসীমায় ৩টি পাইরেসির ঘটনা উল্লেখ করেছিল রিক্যাপ।
চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা দস্যুতামুক্ত রাখার কৃতিত্ব কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীর, মন্তব্য করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (ভিটিএমইএস) এরিয়া বাড়িয়েছি। আমাদের জলসীমার কোথাও অসংগতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ডকে জানানো হয়। তারাও সবসময় তৎপর থাকে। এছাড়া নৌবাহিনীও সমুদ্রসীমায় কাজ করছে। ফলে দস্যুতামুক্ত বন্দরের তকমা পেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।
-দেশ রূপান্তর