
নিউজ মেট্রো প্রতিনিধি :
আটটি খাতকে অগ্রাধিকার রেখে মোট ৩৭টি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীকে আরও এগিয়ে নিতে চান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অঙ্গীকারের স্বপ্নের কাচ্চি বিরিয়ানি নয়, নগরের বিপুল জনগোষ্ঠীকে নূ্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সবার সহযোগিতা পেলে আমি যোগ্যতার পরীক্ষায় জিতব বলে আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী।’ শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সাথে নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণাকালে এসব কথা বলেন তিনি।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচিসহ আটটি খাতকে অগ্রাধিকার রেখে ইশতেহারে ৩৭টি প্রতিশ্রæতির সম্বলিত ইশতেহার পাঠ করেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী নিজেই। এসময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শিক্ষাবিদ অনুপম সেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক (সাবেক সিটি মেয়র) আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহারে জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রধান হিসেবে নিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘নগরীর সবচেয়ে পুরানো ও বড় সংকট জলাবদ্ধতা তথা জলজট। মেঘ দেখলেই আমাদের গলা শুকিয়ে যায়। কাটে নির্ঘুম রাত। জলাবদ্ধতা ও জোয়ার জলের স্ফীতি রোধে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। সিডিএ, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ কিছু সেবা সংস্থা এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ওয়াসায় যুক্ত হয়েছে পয়ঃনিস্কাশন প্রকল্প। এসব মহাপ্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়নে অবশ্যই সর্বোচ্চ মনোযোগ থাকবে।
এছাড়াও মেয়র নির্বাচিত হলে ১০০ দিনের অগ্রাধিকার হিসেবে জলাবদ্ধতা নির্মূল মহাপরিকল্পনা ও নগর উন্নয়নে ডেল্টা প্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়নে যাতে ন্যূনতম বাধা ও দীর্ঘসূত্রিতা হবে না উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সাথে বসে তা তদারকে অগ্রাধিকার দেবো। নির্বাচিত হলে নগরীর দখলকৃত খাল, নালা, নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্র“টি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করব।
পাশাপাশি নগরীর যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ ও সড়ক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা নর্দমা, খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ করে সবার সমন্বিত উদ্যোগে নাগরিক বান্ধব নগর গড়তে দ্রুত খাল, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, অপচনশীল পলিথিন ও প্লাষ্টিক বর্জ্যরে আলাদা ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে রপ্তানি উপযোগী গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরির উদ্যোগ নেয়া, চট্টগ্রামকে পর্যটন রাজধানী বানাতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পর্যটন খাত ও সৈকত পর্যটনে আধুনিক সুবিধা বাড়িয়ে এই খাত থেকে নগর উন্নয়নে বাড়তি আয়ের উপর জোর দেয় এবং হোল্ডিং ট্যাক্সের বিতর্ক অবসানে ডিজিটাল গৃহশুমারি করে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন, ওভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ ও কর বিভাগে সর্বোচ্চ নজরদারি ও স্বচ্ছতা-দক্ষতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রতি দেন রেজাউল করিম।
ইশতেহারে রেজাউল করিম এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার চলমান প্রকল্প, মেগাপ্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে বন্দরসহ সব সেবাখাতের উন্নয়ন কাজে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে জোরদার ভূমিকা ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন, বন্ধ হয়ে যাওয়া নাগরিক পরিসেবা কার্যক্রম পুনরায় চালু, রূপসী চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ ও ভূ প্রকৃতির ক্ষতি না করে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখা, ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হওয়ার কথা জানান।
ইশতেহারে আরও যা ছিল- পাহাড়, হ্রদ, বনানী সংরক্ষণ, সবুজায়ন, বেড়িবাঁধ ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে উপকুলসহ সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস-প্লাবন থেকে নগর সুরক্ষায় গুরুত্ব দেয়া, কর্ণফুলী ও হালদা নদী দখল, দুষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ-ষ্টিমার সেবা চালু করে নগর পরিবহনের বাড়তি চাপ কমানো, মশকমুক্ত নগর গড়তে কার্যকর ও পরিবেশ উপযোগী কীটনাশক প্রয়োগ ও বদ্ধ ডোবা, জলাশয় নিয়মিত পরিস্কার রাখা, অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা, নগরীর ব্যস্ততম সব কেন্দ্রে আধুনিক পাবলিক টয়লেট ও মহিলাদের জন্য নিরাপদ টয়লেট তৈরি করা, সব সড়ক ও গলি উপ-গলিতে পর্যাপ্ত এলইডি সড়ক বাতি ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া, স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে নগরীর মানবতাবাদী ধনাঢ্য ব্যক্তি ও কর্পোরেট গ্র“পকে যুক্ত করা ও স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, চলমান হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহির্সেবা কার্যক্রম উন্নত ও নতুন বহিঃবিভাগ চালু, কর্পোরেট ও ধনাঢ্যদের সহযোগিতা পেলে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীতে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ বেডের হাসপাতাল গড়ে তোলা, অসচ্ছল নাগরিকরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেতে নগরের প্রতি ওয়ার্ডে একটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নাগরিক নিরাপত্তা জোরদারে সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সীর সহযোগিতায় প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বিশিষ্ট নাগরিক সমন্বয়ে অপরাধ নির্মূল কমিটি গঠন, সাইবার দুষণ ও আসক্তি নির্মূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রাখার ওপর জোর দেয়া ইত্যাদি।