লাখো ভক্ত অনুরক্তদের চোখের জলে ভাসিয়ে চিরবিদায় নিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান।দু’দফা জানাযা শেষে আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে সকাল নয়টার দিকে সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের এই খ্যাতিমান অভিনেতা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 80 বছর।
রাষ্ট্রপ্রতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপ্রতি তাঁর শোক বার্তায় বলেন, এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে তার অবদান দেশের জনগণ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি হামিদ মরহুম শামসুজ্জামানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর শোকবার্তায় বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পে অসাধারণ নৈপূণ্য প্রদর্শনের জন্য মরহুম শামছ্জ্জুামান দেশের জনগণের অন্তরে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বরণ্যে অভিনেতা এটিএম শামছুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এক শোক বার্তায় তথ্যমন্ত্রী মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, সর্বজননন্দিত শিল্পী এটিএম শামছুজ্জামান তার অনন্য অভিনয় শিল্পের মাধ্যমে দেশের মানুষের হৃদয়ে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এটিএম শামসুজ্জামান । তাঁর পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছিলেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিলেন আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। তার পিতা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধূরির বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। এছাড়াও খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তদের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন জলছবি (১৯৭১) চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক।
২০০৯ সালে শাবনূর-রিয়াজ জুটির এবাদত ছবি দিয়ে তার চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে। তিনি রেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।