Home অর্থনীতি ঠিকাদার জটিলতায় আটকা চায়না ইকোনোমিক জোনের কাজ

ঠিকাদার জটিলতায় আটকা চায়না ইকোনোমিক জোনের কাজ

0
ঠিকাদার জটিলতায় আটকা চায়না ইকোনোমিক জোনের কাজ

বঙ্গবন্ধু টানেল রোডের লাগোয়া কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ৭৮৩ একর জায়গায় ৩৭১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে পাঁচ বছর আগে চীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয় চট্টগ্রামের চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের। কিন্তু প্রকল্পের কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। সাড়ে ৩ বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। বিশেষ এ অর্থনৈতিক জোনকে ঘিরে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যে স্বপ্ন দেখা গিয়েছিল তা ফিকে হয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) কর্মকর্তারা বলছেন, ‘চীন সরকারের সঙ্গে জি টু জি ভিত্তিতে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তিত হয়েছে। তবে নতুন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না হওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে। চুক্তি হলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে।’

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেসের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বেজার জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে চীনা কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নতুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিলম্বের কারণে প্রকল্পটি স্থবির হয়ে আছে।

বেজা সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে চীনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে তাদের শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ ব্যক্ত করে। তখন চীন সরকার তাদের বিনিয়োগকারীদের সমুদ্রবন্দর-সংলগ্ন চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) ও শিল্পাঞ্চল গড়ার পরামর্শ দেয়। অতঃপর চীন সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বেজার মধ্যে ‘চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন’ স্থাপনের জন্য সমঝোতা স্মারক সই হয়।

এ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৮৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ ও আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন প্রতিষ্ঠার চুক্তি সই করেন। পরে চীন সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজের জন্য ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান হিসেবে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে মনোনীত করে। ২০১৭ সালের জুন মাসে চায়না হারবারের সঙ্গে বেজা’র চুক্তি হয়।

চুক্তি সইয়ের পর প্রায় ৫ বছর পার হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোন। কাছেই রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড। ইকোনমিক জোন ঘেঁষে চলে গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মূল সড়ক। পিচঢালা সড়ক থেকে নেমে ইটবিছানো রাস্তা দিয়ে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার যেতে হয়। প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেল, ইকোনমিক জোনের গেট বন্ধ। গেটের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, টিলার ওপর তৈরি করা হয়েছে একটি ছোট ভবন। চারদিক খাঁ খাঁ করছে। বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকা। ভবনের ভেতরে ইকোনমিক জোনের প্রস্তাবিত শিল্পাঞ্চলের সুদৃশ্য নকশা। প্রকল্পের কোথায় কী ধরনের শিল্প স্থাপন করা হবে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নকশায়।

ভবনটিতে থাকেন চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় বাড়ৈ। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে ২০১৯ সাল থেকে কার্যত প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। কবে আবার কাজ শুরু হবে জানেন না জানিয়ে তিনি বলেন, মাঝেমাঝে মিরসরাই ইকোনমিক জোন থেকে একজন কর্মকর্তা এসে ঘুরে যান। তিনিও এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি।

চায়না হারবারের নিয়োজিত এ কর্মকর্তা জানান, কাজ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ২০০ একর পাহাড়ী এলাকা সমান করা হয়েছে। পিএবি সড়ক থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত ৪০ ফুট চওড়া এক কিলোমিটার এবং বৈরাগ এলাকা থেকে ইকোনমিক জোন পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক তৈরি করা হয়েছে। বৈরাগ অংশে প্রায় এক কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে।

জানা যায়, বিশেষায়িত এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কেবল চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য শিল্প স্থাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল, গার্মেন্ট, আইটি, রাসায়নিক, টেলিযোগাযোগ, কৃষিনির্ভর শিল্প, প্লাস্টিক পণ্য প্রভৃতি ৩৭১ ধরনের শিল্প স্থাপনের কথা রয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কখন হবে তা রয়েছে অনিশ্চয়তায়।

বেজার মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দয়ানন্দ দেবনাথ বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষ ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করায় ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের কাজ বন্ধ রয়েছে। নতুন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। চুক্তি হলেই নতুন করে কাজ শুরু হবে। কবে নাগাদ এ চুক্তি হতে পারে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চায়না ইকোনমিক জোন ঘিরে চট্টগ্রামে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকা এবং বিস্তীর্ণ জায়গা অব্যবহৃত পড়ে থাকা দুঃখজনক। তিনি বলেন, একই সঙ্গে চুক্তি হলেও যেখানে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে সেখানে চায়না ইকোনমিক জোনের কাজ শুরু করতে না পারা দুঃখজনক। যদি কোনো জটিলতা থেকে থাকে তা নিরসন করে দ্রুত প্রকল্পের কাজ দরকার।

-দেশ রূপান্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here