
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদের ছুটিতে জমেছে চট্টগ্রামের বিনোদন স্পটগুলো। তিল ধারণের ঠাই নেই নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও ফয়’স লেক কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্কে। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর নগরীর বিভিন্ন শিশু পার্ক ও চিড়িয়াখানা।
ঈদের ছুটিতে পাল্টে গেছে নগরীর চিরচেনা দৃশ্য। সকালে ঘুম থেকে ওঠেই কর্মস্থল কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমুখী দৌঁড়ের তাড়া নেই কারো। তবে আছে আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের বাসা বাড়িতে বেড়ানো কিংবা পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার তাগাদা। কর্মব্যস্ততার কারণে যে মানুষগুলোর সাধারণত কোথাও বেড়ানোর ফুরসত মিলেনা- তারাও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে যাচ্ছে বিভিন্ন বিনোদন স্পটে।
চট্টগ্রাম নগরীতে হাতেগোনা যে ক’টি বিনোদন স্পট রয়েছে তার মধ্যে দর্শনার্থীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও ফয়’স লেক এমিউজমেন্ট পার্ক। সারা বছরই এসব স্পট থাকে বিনোদন পিপাসু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে। আর ঈদের ছুটিতে সে আগ্রহের মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণ।
ঈদের দিন বিকেল থেকেই হাজার হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে ভিন্ন রূপ পায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। সরেজমিন দেখা যায়, সমুদ্র তীরে বসে কারো দৃষ্টি যাচ্ছে দূর সমুদ্রে ভাসতে থাকা সারি সারি পণ্যবাহী জাহাজের দিকে আবার কারো চোখ সাগর তীরে আঁচড়ে পড়া বড় বড় ঢেউয়ের প্রতি। তীরের কাছাকাছি সাগরে নেমে আনন্দ উপভোগ করছেন অনেকেই। আবার কেউ হাঁটছেন কিংবা বøক দিয়ে তৈরি ওয়াকওয়ের ওপর দিয়ে। সৈকতে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্টগুলোর কাঁকড়া ভাজা কিংবা চিকেন ফ্রাই এর স্বাদ নিচ্ছেন কেউ কেউ। সাগর তীরে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা ঝিনুক কিংবা অন্যান্য সামগ্রীর দোকানগুলোতেও ঢুঁ মারছে কেউ কেউ। সৈকতে ভাড়ায় খাটানো ঘোড়ায় আরোহন আর স্পিড বোটে সমুদ্র ঘুরে আসার মধ্য দিয়ে বিনোদনের পূর্ণতা উপভোগ করছে এই স্পটে আসা দর্শনার্থীরা।
পতেঙ্গা সৈকত এলাকার দোকানদার আবদুল মান্নান রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়িত করায় সৈকতের চেহারা বদলে গেছে। এতে এ স্পটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আকর্ষন বেড়েছে। তিনি জানান, ঈদের দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিনই বিকেলে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠছে সৈকত এলাকা।
নগরীর বহদ্দার হাট থেকে সপরিবারে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া বেসরকারী চাকুরিজীবী সালমান শরীফ বলেন, ঈদের ছুটিতে সবাই চায় একটু কোথাও ঘুরতে। কিন্তু নগরীতে বেড়ানোর মতো পছন্দসই জায়গা খুব একটা নেই। তাই এতদূরে ছুটে আসা। তিনি বলেন, সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে দূর সাগরের জলরাশির দিকে তাকালে মন জুড়িয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা বড় বড় জাহাজগুলো দেখার সুযোগ আর কোথাও নেই।
নগরীর আরেকটি জনপ্রিয় বিনোদন স্পট ফয়’সলেক কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্কে ঈদের ছুটিতে ভিড় জমছে বিনোদন পিপাসু মানুষের। সেখানে স্পিড বোটে করে পাহাড় ঘেরা লেকে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছে কেউ কেউ। আবার কেউ ছুটে যাচ্ছে সী ওয়ার্ল্ডের সুইমিং পুলে। বাচ্চাদের রাইডসগুলোতে পড়েছে দীর্ঘ লাইন।
কনকর্ড এমিউজমেন্ট পার্কের উপ-ব্যবস্থাপক বিশ্বজিত ঘোষ জানান, সাধারণ সময়ের তুলনায় ঈদের সময় দর্শনার্থীর সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দর্শকদের আনন্দ দিতে পার্ককে সাজানো হয়েছে নতুন করে। রাইডসগুলোও সংস্কার করা হয়েছে।
পতেঙ্গা কিংবা ফয়’স লেক ছাড়াও অন্যান্য বিনোদন স্পটগুলোও ঈদের ছুটিতে মুখর হয়ে ওঠছে সব বয়সী মানুষের পদভাবে। এর মধ্যে রয়েছে কাট্টলী সমুদ্র সৈকত, পাহাড়তলী চিড়িয়াখানা, বহদ্দার হাট স্বাধীনতা পার্ক, পতেঙ্গা প্রজাপতি পার্ক, কাজীর দেউড়ি শিশু পার্ক, আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, পতেঙ্গা প্রজাপতি পার্ক, শাহ আমানত সেতুসহ বিভিন্ন স্পট।
গুরুজনকে সালাম করে ঈদের সেলামী পাওয়া কিংবা শুধু সেমাই আর কোরমা-পোলাও নিয়ে ঈদ নয়। ঈদের ছুটিতে ভিন্ন কিছু উপভোগ করতে বিভিন্ন বিনোদন স্পটে ছুটে যাচ্ছে মানুষ। আর এর মধ্য দিয়েই তাঁরা খুঁজছে ঈদ আনন্দের পূর্ণতা