Home রাজনীতি হেফাজতের নতুন আমির নিয়ে শফিপন্থীদের অসন্তোষ

হেফাজতের নতুন আমির নিয়ে শফিপন্থীদের অসন্তোষ

0
হেফাজতের নতুন আমির নিয়ে শফিপন্থীদের অসন্তোষ

আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নতুন আমির ঘোষণার পর বিতর্ক ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম শূরা কমিটির সভা ছাড়া মৌখিক পরামর্শে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনকে অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিক আখ্যায়িত করছেন অনেকেই। বিশেষ করে আহমদ শফীপন্থি হিসেবে পরিচিতদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর গত ১৯ আগস্ট তার জানাজার আগে নতুন আমির হিসেবে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা, ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর নাম ঘোষণা করা হয়।

কোনো ধরনের সাংগঠনিক সভা ছাড়া এভাবে সংগঠনের আমির নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, হেফাজতে ইসলাম বড় একটি সংগঠন। এর সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো আছে। আমিরের শূন্যতা পূরণে শূরা কমিটি বসে পরামর্শ করে কাউন্সিলের মাধ্যমে আমির নির্বাচন করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু তা না করে যে প্রক্রিয়ায় শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে তা পুরোপুরি অগঠনতান্ত্রিক।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী এ প্রসঙ্গে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন আমির নির্বাচন নিয়ে যা করা হয়েছে তা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। এটা অসাংগঠনিক ও অগঠনতান্ত্রিক। এটা মেনে নেওয়া যায় না। ’ তিনি বলেন, ‘মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী একটি সম্মানিত আলেম।

২০১৫ সালে তিনি হেফাজত ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেন। সংগঠন থেকে পদত্যাগী একজন ব্যক্তিকে টেনে এনে একবার প্রধান উপদেষ্টা আবার আমির নির্বাচন করা এমন অনিয়মের মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই একটি সংগঠন চলতে পারে না। একধরনের স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। সংগঠনের আমির মারা গেছেন। কাউন্সিল ডেকে আমির নির্বাচন করতে হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে আমরা হেফাজতের কমিটির বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছি। আমাদের মাঝে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরা ঘুরে দাঁড়াব। ’

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা রুহী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এভাবে আমির নির্বাচন কোনোভাবেই সাংগঠনিক নিয়মের মধ্যে পড়ে না। আমির হবেন নায়েবে আমিরদের মধ্য থেকে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। তাও হতে হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে। কিন্তু এখানে মহাসচিবের ইচ্ছায় সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টাকে এনে আমির করা হয়েছে। মূলত সংগঠনে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহাসচিব এ কাজ করেছেন। ’

তবে সাংগঠনিক সভা ছাড়া আমির নির্বাচনের পদ্ধতিকে অসাংগঠনিক মানতে নারাজ হেফাজতে ইসলামের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে মৌখিকভাবে পরামর্শ করেই মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে নতুন আমির নির্বাচন করা হয়েছে এবং উপস্থিত বিপুলসংখ্যক জনগণ তা অনুমোদন দিয়েছে। কাজেই এখানে নতুন করে নতুন নেতৃত্ব অনুমোদনের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এ নিয়ে যারা বিতর্ক করতে চায়, তারা করুক। ’ তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিষয় নিয়ে সুবিধাজনক সময়ে সভা ডাকব। তবে এখনো সভার সময় নির্ধারণ করা হয়নি। ’

হেফাজতের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলন, হামলা-মামলা, সংগঠনের আমির আহমদ শফীর মৃত্যু, জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন, শফীপন্থি হিসেবে পরিচিতদের কমিটি থেকে বাদ পড়া এসব নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কওমিপন্থি এ সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ নানা বিশৃঙ্খলা চলে আসছে। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর থেকে সংগঠনে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তার ছেলে আনাস মাদানীসহ তার অনুসারীরা। শফীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করা হত্যা মামলার কারণে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধ আরও তীব্র ধারণ করেছে।

গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফী। এরপর ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নুর হোসেন কাসেমীকে মহাসচিব করে ঘোষণা করা হয় ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি। শফীপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদের অধিকাংশই এ কমিটি থেকে বাদ পড়েন। কমিটি গঠনের এক মাসের মাথায় মারা যান মহাসচিব নুর হোসেন কাসেমী। এরপর নুরুল ইসলাম জেহাদীকে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়। গত ১৯ আগস্ট মারা যান সংগঠনটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।

২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম নামে অরাজনৈতিক সংগঠন। পরবর্তী সময়ে এ সংগঠনে সারা দেশের কওমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যুক্ত হওয়ার পর এটি দেশে বৃহৎ একটি সংগঠনে রূপ নেয়। শাহ আহমদ শফী আমৃত্যু সংগঠনটির আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

-দেশ রূপান্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here