
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আবেগ আর অশ্রæ দিয়ে চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য দলীয় সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভিড় ছিল দেখার মতো। চট্টগ্রাম শহর ও রাউজানে অনুষ্ঠিত দু’টি জানাযাতেই ঢল নেমেছিল জনতার। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাউজানের গহিরায় পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত হন তিনি।
জানাযার জন্য শুক্রবার জুমার নামাজের আগেই আবদুল্লাহ আল নোমানের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে। জুমার নামাজের পর সেখানে জানাযায় মানুষের ঢল নামে। দল মত নির্বিশেষে চট্টগ্রাম নগর ও জেলা থেকে দলে দলে লোকজন ছুটে আসে সেখানে। নগরীর বিভিন্ন মসজিদের জুমার নামাজ শেষ হবার পর জমিয়াতুল ফালাহ অভিমুখে জন¯্রােত সৃষ্টি হয়। জমিয়াতুল ফালাহ ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হবার পর পাশ^বর্তী সড়কে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন হাজার হাজার মানুষ। জানাযায় আগত লোকজনের সুবিধার্থে কাজির দেউড়ি, আলমাস মোড় ও ওয়াসার মোড়ে মাইক লাগানোর ব্যবস্থা করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
জানাযায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা শরীক হন। সেখানের জানাযার পূর্বে আবদুল্লাহ আল নোমানের পুত্র সাঈদ আল নোমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক ও গোলাম আকবর খোন্দকার, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড শাহ আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এরশাদ উল্লাহ, মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা শাহজাহান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
জমিয়তুল ফালাহ’র জানাযা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জন্মস্থান রাউজানের গহিরায়। সেখানে বাদে আসর গহিরা হাইস্কুল মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
গত মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বাসায় ইন্তেকাল করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে তাঁর মরদেহ চট্টগ্রাম আনা হয়। রাখা হয় কাজির দেউড়িস্থ ভিআইপি টাওয়ারের বাসার পার্কিংয়ে। শুক্রবার সকাল আটটায় নোমানের মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রথমে ভেটেরিনারি বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ইস্ট ডেল্টা বিশ^বিদ্যালয়। সকাল ১১টায় নগরীর নুর আহমদ সড়কস্থ নাসিমন ভবনস্থ বিএনপি কার্যালয়ে নেয়া হয় নোমানের মরদেহ। বেলা ১টা পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীরা সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
একজন সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত আবদুল্লাহ আল নোমান একসময় ন্যাপের (ভাসানী) রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন। দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাঁকে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। চট্টগ্রামের রাউজান ও কোতোয়ালি আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি সরকারের মন্ত্রিসভায় খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন আবদুল্লাহ আল নোমান।