Home বন্দর নগরী শাহাদাতের ইশতেহারে ৯ ইস্যু অগ্রাধিকার

শাহাদাতের ইশতেহারে ৯ ইস্যু অগ্রাধিকার

0
শাহাদাতের ইশতেহারে ৯ ইস্যু অগ্রাধিকার

নিউজ মেট্রো প্রতিনিধি
চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত, স্বাস্থ্যকর, শিক্ষাবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ, সাম্য-সম্প্রীতির, নান্দনিক, তথ্য প্রযুক্তি ও সহনীয় গৃহকর সমৃদ্ধ নগরী হিসাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় তিনি বলেছেন, রাজনীতিতে নিজেকে নেতা নয়-কর্মী মনে করি। নগর পিতা নয়, আমি ‘নগর সেবক’ হতে চাই। শনিবার দুপুরে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
দলীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ঘোষিত ইশতেহারে চট্টগ্রাম নগরকে ঘিরে তাঁর নয়টি অগ্রাধিকারের বর্ণনা দেন এবং এসব বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনাও তুলে ধরেন। এসময় ডা. শাহাদাত বলেন, নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজন ও সময়ের পরিক্রমায় তা উন্নত হতে উন্নততর পর্যায়ে উন্নীত হয়। যার জন্য প্রয়োজন সততা আর নিষ্ঠার সাথে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়ন। তাই অবাস্তব প্রতিশ্রæতির ফুলঝুড়ি নয়- প্রয়োজন ত্রæটিহীন পরিকল্পনা, বাস্তবায়নে অভিজ্ঞতা, অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানোর যৌক্তিক আকাঙ্খা এবং সততা ও দুর্ণীতিমুক্ত মানসিকতা।
তিনি বলেন, নগরবাসীর অধিকার সংবিধান নির্দিষ্ট করে দিলেও তা দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনই পাওে বিদ্যমান উন্নয়ন অংশীদার সংস্থা সমূহের সাথে সমন্বয় সাধন করে নগরবাসীর দোরগোড়ায় উন্নয়ন পৌঁছে দিতে। মেয়র নির্বাচিত হলে এ প্রচেষ্ঠায় সফল হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
ডা.শাহাদাত বলেন, একটি পরিচ্ছন্ন নগর ও নগরবাসীর উন্নত জীবন গড়তে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, নগরের সৌন্দর্যবৃদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ, নাগরিক বিনোদন, কর্মসংস্থান, পরিবেশ দূষণ ও ভেজালমুক্ত করণ, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজমুক্ত করণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসন চ্যালেঞ্জ উত্তরণে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
নির্বাচনী ইশতেহারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাতের ৯ অগ্রাধিকারের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ‘জলাবদ্ধতা মুক্ত চট্টগ্রাম’। নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর একটি পাহাড়, সাগর ও নদী পরিবেষ্টিত শহর। পাহাড় হতে বৃষ্টির পানি বিভিন্ন খাল হয়ে শহরের মধ্য দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয়। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি মাটি পড়ে খাল ও নালা বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে তা খালে গিয়ে পড়ে। যা নিরসনে শহরের মধ্যে প্রবাহিত খাল উদ্ধার করে তা পানি চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং খালের উভয় পাশ রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রতি বছর বর্ষার আগে শহরের সমস্ত খাল, নালা-নর্দমা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারসহ পানি চলাচলের উপযুক্ত করে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করবো। ১৯৯১-১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের সময় ইউএনডিপি এর সহায়তায় নালা নর্দমা সংস্কারের যে মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছিল পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার তা বন্ধ করে দেয়। নির্বাচিত হলে সেটি পুনঃবাস্তবায়ন করবো।
চট্টগ্রামকে স্বাস্থ্যকর নগরী হিসাবে গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে শাহাদাত বলেন, কর্পোরেশন এলাকায় অবহেলিত বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য বিভাগ। মহানগরের জনসংখ্যা গত ৫০ বৎসরে প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেলেও নতুন কোনও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় শয্যা সংখ্যার অপ্রতুলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় ১০টি বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকলেও চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত নেই। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত বন্দরনগরীর স্বাস্থ্য সেবার পরিধি বৃদ্ধিকল্পে অন্তত আরও ২ হাজার শয্যার পর্যাপ্ত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। সাথে সাথে শিশু হাসপাতাল, মাতৃসদন ও ট্রমা সেন্টারসহ বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। সেই সঙ্গে করোনা পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে বিশ^মানের পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে যাতে নতুন রোগ নির্ণয় সহজসাধ্য হয়। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে ‘মোবাইল মেডিকেল ইউনিট’ স্থাপনেরও প্রতিশ্রæতি দেন তিনি।
শিক্ষাবান্ধব চট্টগ্রাম গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত কওে ডা. শাহাদাত বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় এনে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন, স্কুলে প্রবেশ, প্রস্থান, ক্লাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও পরীক্ষার ফলাফল সবকিছু যাতে অভিভাবকরা ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে মনিটরিং করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। করপোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকারি নির্দেশনার আলোকে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত জীবনে নেতৃত্ব ও গুণাবলী অর্জনের নিমিত্তে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে মেয়র প্রার্থী শাহাদাত বলেন, নির্বাচিত হলে জনগণের উন্নত সেবা নিশ্চিতকরণে বর্তমান গৃহকরের প্রয়োজনীয় বিন্যাস ও সরলীকরণ করাসহ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। এছাড়া নি¤œ আয়ের নগরবাসী, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের আবাসন গৃহ করমুক্ত করা হবে। হিজরা, ভবঘুরে ও ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হবে। শ্রমজীবীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে আবাসন সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হবে।
সেবক হিসাবে পরিচ্ছন্নতাকে নির্বাচিত মেয়রের অন্যতম প্রধান কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবেশ বান্ধব নান্দনিক পর্যটন নগরী গড়তে পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই। মেয়র নির্বাচিত হলে চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগকে ঢেলে সাজিয়ে আধুনিকায়ন করা হবে। সেই সাথে উন্নত বিশে^র আদলে চট্টগ্রাম নগরীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য পরিস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
চট্টগ্রামকে নিরাপদ নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, সন্ত্রাস দমন ও মাদক বিরোধী কার্যক্রম জোরদারসহ এলাকাভিত্তিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চালু করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মসূচীর মাধ্যমে মাদকাসক্তি ঝুঁকি কমাতে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাজার বছরের ঐতিহ্যের আলোকে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ করার প্রয়াস অব্যাহত রাখার মাধ্যমে সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতিও দেন শাহাদাত।
চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এজন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বিরল প্রকৃতির সৌন্দর্য্যরে আলোকে পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধন করা হবে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে আইটি পার্কসহ আইটি উপ-শহর গড়ে তোলারও প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী।
ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে তাঁকে জয়যুক্ত করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, ভোট আপনার পবিত্র আমানত ও সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার রক্ষায় আপনারা সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন।
ইশতেহার ঘোষণাকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এমি, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রমুখ।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here