
নিউজ মেট্রো রিপোর্ট :
রাত পোহালেই বহুল আকাঙ্খিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। বিশেষ করে দুই প্রধান মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত এম. রেজাউল করিম চৌধুরী (নৌকা) ও বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ)-এর মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের আভাস মিলছে এবারের নির্বাচনে।
নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী প্রচারণার শেষ দিনে সোমবার বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে মিছিল-শ্লোগানে জমজমাট হয়ে ওঠেছিল নগরী। আজ নির্বাচন প্রচারণা বন্ধ থাকায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অবস্থান নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে আলোচনা পর্যালোচনা। বিভিন্ন পর্যায়ের ভোটারদের মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা বেশি।
তবে নির্বাচন পূর্ব অপ্রীতিকর নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে উৎসবের মাঝেও শংকা কাজ করছে বিভিন্ন প্রার্থী ও ভোটারদের মনে। নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন নগরীর মোগলটুলি এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থককে গুলি করে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটেছে। ওই হত্যাকান্ডে একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। নির্বাচনের ঠিক দুই দিন আগে ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসায় হামলা ও ফাঁকা গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া হামলার শিকার হয়েছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাতের গাড়ি, তাঁর পক্ষের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ি। হামলার ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কার্যালয়েও। মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত অভিযোগ করেছেন, কতিপয় অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। ৭ দিনের বিভিন্ন থানায় ১০টি সাজানো মামলা দেয়া হয়েছে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বিরূদ্ধে। এসব মামলায় রোববার রাত পর্যন্ত ৬৯জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে সরাসরি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গিয়েও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রায় ছয় বছর পর আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চসিক নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে গত ৮ জানুয়ারি থেকে চলে আসে জমজমাট প্রচারণা। নানা রঙে নানা ঢঙে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো নগরী। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন নগর জুড়ে। তিন সপ্তাহ ধরে কর্মী সমর্থকদের বহর নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়েছেন তাঁরা । কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ছুটে গেছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। পোস্টার লিফলেটে ছেয়ে গেছে নগরীর সবখানে। মাইকে বিভিন্ন গানের প্যারোডি বাজিয়ে চলেছে ভোটের প্রচারণা। দুই দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা এসে অংশ নিয়েছেন প্রচারণায়। শেষ মুহূর্তে ভোট ক্যাম্পেইনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে নৌকার পক্ষে ঢাকা থেকে আসা জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকাদের প্রচারণা। শেষ দিনে প্রার্থীরা শো-ডাউন করেছে বিভিন্ন এলাকায়। সোমবার রাত আটটায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় নির্বাচন উৎসবের অন্যরকম আবহ সৃষ্টি হয় নগরীতে।
নির্বাচনকে ঘিরে নগরীতে বহিরাগতদের আগমন ও অবস্থানের অভিযোগ ওঠছে। গত রোববার রাতে নৌকার প্রার্থী এম রেজাউল করিমের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেছেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ও মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি ও জামাত-শিবির সন্ত্রাসীদের জড়ো করছে। এদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহŸান জানান তিনি।
অন্যদিকে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, নৌকার পক্ষে বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদের নিয়ে মিটিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্ব নিচ্ছে তারা। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এরা কি সিটি কর্পোরেশনের ভোটার। এরা কিভাবে কেন্দ্রে থাকবে। এসব বহিরাগতদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও সম্পূর্ণ দলীয়ভাবেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। দুই প্রধান রাজনৈতিক দল মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থীকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে পুরো নির্বাচন। বর্তমান সরকার আমলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট আসবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সম্পাদিত বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্র বিমুখ ভোটাররা কেন্দ্রে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এ অবস্থায় আগামীকালের নির্বাচনকে ঘিরে নগরীতে উৎসবের আমেজ যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ও বিরাজ করছে নগরবাসীর মধ্যে। তবে সকলের প্রত্যাশা একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আসুক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নতুন মেয়র ও কাউন্সিলর।