
২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার মোট ১৬টি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ‘বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি)ও রয়েছে।
রোববার (২০ এপ্রিল) পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেকের চেয়ারপারসন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
একনেক সভায় মোট ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি নতুন এবং ৩টি সংশোধিত প্রকল্প। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলার পর অবশেষে বে টার্মিনাল প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হলো এবং শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’
তিনি বলেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের বর্ধিত বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড এবং ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো অপরিহার্য।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পৃথক সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে বে টার্মিনালের টার্মিনাল-১ নির্মাণ করবে সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠান এবং টার্মিনাল-২ নির্মাণ করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড।
তিনি বলেন, বে টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দেবে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি এবং সরকারি তহবিল থেকে খরচ হবে ৪ হাজার ১৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ জলবায়ু সহনশীল ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করা হবে, যা বন্দরের জলোচ্ছ্বাস, স্রোত ও প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে সুরক্ষা দেবে। পাশাপাশি বন্দর অববাহিকা, প্রবেশপথ ও অ্যাক্সেস চ্যানেলের খননকাজও করা হবে।
আধুনিক এই বে টার্মিনাল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অপারেটর দ্বারা পরিচালিত হবে এবং প্যানাম্যাক্স আকারের বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে।
প্রকল্পটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে। বিশ্বব্যাংক ও সরকারের অর্থায়নে এই প্রকল্প বিনিয়োগকারীদের আস্থা যোগাবে এবং ঝুঁকি হ্রাস করবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বেসরকারি খাতের শাখা আইএফসি একটি বেসরকারি টার্মিনালে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বিবেচনা করছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পশ্চিমে আনন্দনগর/সন্দ্বীপ চ্যানেলে অবস্থিত বে টার্মিনালটি ঢাকার সঙ্গে সড়ক ও রেল সংযোগে নিকটবর্তী এবং এটি দেশের মোট কনটেইনার পরিবহনের ৩৬ শতাংশ পরিচালনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে দশ লাখেরও বেশি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন যাদের অর্ধেকই নারী। যাদের মধ্যে রয়েছেন শিপিং কোম্পানি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররা।
এছাড়াও বৈঠকে যে প্রকল্পগুলো অনুমোদিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বহুমুখী জরুরি প্রকল্প (২য় সংশোধিত), বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং) প্রকল্প, চট্টগ্রাম মহানগর পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, লাইভেবল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ সিটিস ফর অল (এলআইসিএ) প্রকল্প, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প, বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণের জন্য যন্ত্রপাতি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং)- এগ্রিকালচার সিস্টেম রেস্টোরেশন কম্পোনেন্ট প্রকল্প, বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি, ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং)- (বিডব্লিউডিবি) প্রকল্প, কৃষি খাত রূপান্তর কর্মসূচির টেকসই ও সহনশীল বিনিয়োগে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, গ্রিন রেলওয়ে পরিবহণ প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে দুইটি গভীর অনুসন্ধানমূলক কূপ খনন, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের খনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, সামাজিক সুরক্ষা জোরদার প্রকল্প (এসএসপিআইআরআইটি) প্রকল্প, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম সেসিপ) (৪র্থ সংশোধনী) প্রকল্প, ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রজেক্ট-২ (এফএসএসপি-২) এর আওতায় প্রজেক্ট প্রিপারেশন অ্যাডভান্স (পিপিএ) প্রকল্প।
এছাড়া আরও দুটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং পূর্বে অনুমোদিত পাঁচটি প্রকল্প সম্পর্কে সভায় অবহিত করা হয়।
সভায় সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
-বাসস